Healthy Habit

কুখ্যাত নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমানের রেইনহাম মসজিদের বিল্ডিং আত্মসাৎ এবং রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র ভূমিকা

লন্ডন বরো অফ হ্যাভেরিং এর ছোট্টো একটি গ্রামের নাম রেইনহাম, ছায়া ঢাকা শান্ত স্নিগ্ধ গ্রামটি মোটামোটি টেমস নদীর গা ঘেঁষেই তার অবস্থান জানান দিচ্ছে। টেমস নদীর উপর সর্বোচ্চ ব্রিজ যা ডার্টফোর্ড ব্রিজ নামে পরিচিত এবং রেইনহাম গ্রামটি কিন্তু তার ই নিকট পড়শী। ২০১৬ সালের আগে এই গ্রামে হাতেগুনা কয়েকটি বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানী পরিবারের লোকজনের আনাগুনা নজরে আসতো। সত্যি বলতে বাংলাদেশীদের অত্যন্ত বড়ো এবং বিশাল কমিউনিটি রয়েছে পুরো পূর্ব লন্ডন জুড়ে। রেইনহাম গ্রামটি পূর্ব লন্ডন থেকে মাত্র ১০ মাইল দূরে অবস্থিত। তাই ইদানিং বাংলাদেশীদের অনেকে এই গ্রামে বসবাসের জন্য স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন, অনেকে বাড়ী ভাড়া করে এই গ্রামে এসেছেন এবং অনেকে আবার বাড়ি কিনেও বসবাস করছেন। বলতে গেলে ২০০ এর বেশী বাংলাদেশী, পাকিস্তানী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনমানবের সমাগম ও বসতি রেইনহাম গ্রামটিতে গড়ে উঠেছে। এখানে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সেকেন্ডারি স্কুল এবং সম্প্রতি একটি সিক্সথ ফোরাম কলেজ ও এখানে গড়ে উঠেছে। ডাক্তার, ফার্মেসি, ডেন্টিষ্ট সবই নিতান্তই হাতের নাগালে। দৈনন্দিন পারিবারিক খরচের জন্য রয়েছে টেসকো এক্সট্রা সুপার মার্কেট। তাছাড়া আমাদের দেশীয় খাবারের কেনাকাটার জন্যও রয়েছে একটি বাংলাদেশী মোদির দোকান। তবে, যারা বড়ো ধরণের খরচের জন্য ইচ্ছা পোষণ করেন তাদেরকে তেমন দূরে যেতে হয়না, মাত্র ৪ থেকে ৫ মাইলের ভিতরেই রয়েছে বাংলাদেশী খাবারের পাইকারি ও খুচরা কয়েকজন বড়ো বড়ো বিক্রেতার বিশাল বিক্রয় কেন্দ্র।

যাই হোক, রেইনহাম গ্রামের সবচেয়ে বড়ো যে সমস্যা তা হচ্ছে এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য এখনো কোনো মসজিদ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি বলা হয়তো ঠিক হবেনা, কারণ টেসকো এক্সট্রা সুপার মার্কেট এর পাশে হ্যাভেরিং কাউন্সিলের রয়েল ইয়ুথ সেন্টার নামে নিজস্ব একটি স্থাপনা রয়েছে যেখানে নিয়মিত একটি চাইল্ডকেয়ার পরিচালিত হয়, তার সাথে এখানে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মুসলমান কিছু ভাইয়েরা একটি জুম্মার নামাজের বন্দোবস্ত করে দীর্ঘদিন থেকে পরিচালনা করে আসছেন। তাছাড়া রমজান মাসে তারা তারাবীর নামাজের ও বন্দোবস্ত করে থাকেন দীর্ঘদিন থেকে। আমাদের বাংলাদেশী ভাইয়েরা সেখানেই যাওয়া আসা করতেন এবং এখনো অনেকে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন।

এবার মূল কথায় আসি, ২০২০ সালের কোরোনা মহামারীর সময়কার ঘটনা, রেইনহাম গ্রামটিতে একটি মাত্র হাই স্ট্রিট ব্যাঙ্ক বার্কলেজ এর একটি শাখা ছিলো, যা ছিলো তিনটি সুবিন্যস্ত ফ্লোরে বিভক্ত, বিল্ডিংয়ের ভিতরে দুইদিকে সিঁড়ি রয়েছে, সামনের দিকে বিশাল যাতায়াতের সদর দরজা, পিছনের দিকে রয়েছে বহির্গমনের ব্যবস্থা এবং ১০ থেকে ১২টি গাড়ি পার্কিংয়ের নিজস্ব খালি জায়গা, ঠিকানা: 29-31 Upminster Road South, Rainham, Greater London England, RM13 9YR, HM গভর্নমেন্ট ল্যান্ড রেজিস্ট্রি প্রোপার্টি টাইটেল নম্বর: EGL527157, পূর্ব লন্ডনে বসবাসরত জনৈক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রিয়েল এস্টেট বিসনেসম্যান কামরু আলী সেই প্রোপার্টিটি নিলাম থেকে 20 January 2020′  £৫৫৭,৫০০.০০ পাউন্ড দিয়ে কেনে নিয়েছিলেন। বিল্ডিংয়ের পাশে রয়েছে লি হোপ নামে বাংলাদেশী রেস্তোরা, যার মালিক শাহ মোখলেসুর রহমান। শাহ সাহেব এর সাথে বিল্ডিয়ের নতুন মালিক কামরু আলী’র সাক্ষাৎ হলে শাহ সাহেব বিল্ডিয়ের নতুন মালিক কামরু আলীকে এক পর্যায়ে আলাপের ফাঁকে আগ্রহ প্রকাশ করে বিল্ডিংটিকে রেইনহাম গ্রামের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব করেন এবং বিল্ডিয়ের নতুন মালিক কামরু আলী তাতে খুশি হয়ে স্থানীয় কমিউনিটিকে মসজিদ নির্মাণের নিমিত্তে বিল্ডিংটি দিতেও সম্মত হোন। এ খবর মোখলেস শাহ স্থানীয় কিছু বাংলাদেশীদেরকে জানালে সকলে মিলে উনার রেস্তোরায় আলোচনায় বসে একটি কমিটি করেন এবং বিল্ডিয়ের মালিক কামরু আলী’র কাছ থেকে বিল্ডিংটি কিনে নিতে প্রস্তাব করেন এবং মূল্য পরিশোধের জন্য উনার কাছ থেকে দুই বৎসরের সময় চেয়ে নেন এবং বিল্ডিংয়ের মালিক কামরু আলীও তাতে সম্মত হন। অত্যন্ত খুশীর ব্যাপার হলো বিল্ডিংয়ের মালিক কামরু আলী এই মর্মে সম্মত হন যে যদিও উনি দুই বৎসর পরে তার কেনা বিল্ডিংয়ের মূল্য ফেরত পাবেন কিন্তু যে মূল্য দিয়ে তা তিনি নিলাম থেকে কিনেছেন অর্থাৎ £৫৫৭,৫০০.০০ পাউন্ড, সেই সাথে উনার স্ট্যাম্প ডিউটি, সলিসিটর সহ আনুষাঙ্গিক খরচ সহ সর্ব মোট ৫,৮০,০০০.০০ পাউন্ড ব্যয় হয়| যেহেতু বিল্ডিংটি একটি মসজিদ হবে তাই কামরু আলী সেই মূল্যতেই তিনি খুশি থাকবেন এবং এতে যদি বিল্ডিংয়ের বাজার দাম বেড়েও যায় তাতেও তিনি অতিরিক্ত কোনো মূল্য চাইবেন না। এ কথা ধ্রুব সত্য যে, যুক্তরাজ্যে বিশেষ করে লন্ডনে সকল সময়ই প্রপার্টি’র দাম উর্ধমুখী, সেই হিসাবে যদি উক্ত প্রপার্টি’র দাম দুই বৎসর পর বেড়েও যায় তবু ও তিনি তার কেনা মূল্যেই চেয়ে নিচ্ছেন যা স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য নিতান্তই খুশীর বিষয়।

এই সিদ্ধান্তে সকলে উপনীত হলে সকলে মিলে আপাতত জুমার নামাজ আদায় নিমিত্তে স্থানীয় রেইনহাম গ্রামের লাইব্রেরীতে দুই ঘন্টার জন্য একটি কক্ষ ভাড়া করে প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে জুমার নামাজ চালিয়ে যেতে শুরু করেন এবং যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া মসজিদের কার্যক্রম পরিচালনা নিমিত্তে একটি কমিটি ও গঠিত হয় ১৫ থেকে ২০ জনকে নিয়ে। চ্যারিটি রেজিস্ট্রেশন হয় রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি নামে এবং একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয় তিন জনকে নিয়ে, যাদের মধ্যে সেক্রেটারি হিসাবে রয়েছেন আজিজুর রহমান যিনি HSBC ব্যাংকে কর্মরত আছেন এবং ট্রেজারার হিসাবে নজরুল ইসলাম গজনবী রয়েছেন। মিটিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ থেকে ৪০ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং কমিটির লোকজন স্ট্যান্ডিং অর্ডার করে প্রতি মাসে ২০ পাউন্ড করে ব্যাংকে জমা করতে সম্মত হোন, কমিটির স্থায়ী সদস্যরা প্রত্যেকে £১,৫০০.০০ (পনেরো শত) পাউন্ড করে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র একাউন্টে জমা করতে সম্মত হন, প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের পক্ষ থেকে আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ পাউন্ড করে কালেকশন হতে শুরু হয় যা থেকে মসজিদের প্রস্তাবিত বিল্ডিংয়ের মালিক কামরু আলীকে £২০০০.০০ পাউন্ড করে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা শুরু হয়, এছাড়াও শুক্রবারে ইমামের বেতন, লাইব্রেরীর নামাজের জন্য কক্ষ ব্যবহারের নিমিত্তে দুই ঘন্টার ভাড়া ও প্রস্তাবিত বিল্ডিঙের ইউটিলিটি বিল পরিশোধিত হতে থাকে। ইতিমধ্যে রমজান মাস শেষে ঈদ উল ফিতর চলে আসলে স্থানীয় মেম্বার অফ পার্লামেন্টের অনুরোধে রেইনহাম গ্রামের প্রাইমারি স্কুল এর প্রধান শিক্ষিকার অনুমতি ও সহযোগিতায় স্কুলের মাঠে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে ঈদ উল ফিতর এর নামাজের বন্দোবস্ত হয়। উল্লেখ্য বিগত দুই বছর যাবৎ রেইনহাম গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটিতে তারাবীর নামাজ আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, যিনি এর বিনিময়ে কোনো ধরণের ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানান | এখানে বলা বাহুল্য যে, যারা তারাবীর নামাজ এ অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা আট দশ হাজার করে বিগত দুই রমজানে প্রদান করেন এবং ঈদের নামাজেও মুসল্লিগণ মুক্ত হস্তে সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করতে কুন্ঠাবোধ করেন নি।

যাই হোক এর ই মধ্যে কমিটি’র পক্ষ থেকে মসজিদের অনুমতি প্রাপ্তির নিমিত্তে লন্ডন বরো অফ হ্যাভেরিং কাউন্সিলে আবেদন করা হয়। আবেদনটি কে সহজ করার লক্ষ্যে একজন আর্কিটেক্ট এবং একজন এডভাইসর এর সহযোগিতা নেয়া হয়। যেহেতু প্রস্তাবিত বিল্ডিংটি বার্কলেস ব্যাঙ্ক এর শাখা ছিল তাই যথেষ্ট পরিমান মানুষের নিত্য দিনের যাতায়াত ছিলো সেখানে, এক্ষেত্রে মসজিদের প্ল্যানিং পারমিশন পেতে সহজ হবে বলে সবাই আশাবাদী ছিলেন। উল্লেখ্য লন্ডন বরো অফ হ্যাভেরিং কাউন্সিলটি মূলতঃ লোকাল রেসিডেন্সিয়াল গ্রুপের প্রায় ২৩জন কাউন্সিলর রয়েছে যারা ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টির ছদ্মাবরণে লোকাল রাজনীতি কার্য পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া ২২জন কনসারভেটিব এবং মাত্র ৭জন বর্তমান সরকারের লেবার পার্টির কাউন্সিলর রয়েছেন। এখানে কোনো একজন ও মুসলমান কাউন্সিলর বা প্রতিনিধি নেই যে কিনা প্ল্যানিং কমিটিতে সহযোগিতা করবে। এখানে আরো উল্লেখ করতে হয় যে, যুক্তরাজ্যে কোনো জায়গাতেই বা শহরে সহজে মসজিদ এর জন্য অনুমতি কখনোই প্রথম বারে পাওয়া সম্ভব হয়নি, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে দুই কিংবা তিনবার আপীল করার পর প্লানিং পারমিশন গ্রান্ট হয়েছে। প্ল্যানিং পারমিশন প্রাপ্তি নিমিত্তে মসজিদের কমিটির পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন অনেক ডকুমেন্টস আদান প্রদান এবং কাউন্সিল প্লানিং কমিটির রিকোয়ারমেন্ট মোতাবেক সকল চেষ্টা করার পর অবশেষে প্ল্যানিং কমিটির সাথে মসজিদ কমিটির ৩ জনের একটি টিমের সাথে মিটিং হয় লন্ডন বোরো অফ হ্যাভেরিং কাউন্সিলের মূল বিল্ডিংয়ে। দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা আলাপ আলোচনার পর কাউন্সিল প্ল্যানিং কমিটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য অনুমতি প্রদান করা যাবে তবে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক এর উপরে জমায়েত হতে পারবেন না বলে বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে জুমার নামাজের জন্য কাউন্সিল কোনো অনুমতি প্রদান করতে সম্মত হয়নি।

 

বলা বাহুল্য যে, এ সুখবরটি তিনজনের টিমে যারা ছিলেন তার মধ্যে আজিজুর রহমান এবং নজরুল ইসলাম গজনবী সম্পূর্ণ গোপন রাখেন এবং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে রেইনহাম গ্রামের সকল মানুষকে তারা এই বলে অবহিত করেন যে কাউন্সিল মসজিদের জন্য তাদের আবেদন কে অগ্রাহ্য করে অনুমতি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এদিকে কাউন্সিল এর এই সিদ্ধান্তকে উক্ত ৩ জন সদস্য মেনে নেন নি এবং তারা লন্ডন বোরো অফ হ্যাভেরিং কাউন্সিলকে জানান যে জুমার নামাজ সহ প্ল্যানিং পারমিশন না দিলে তারা সেটা মেনে নেবেন না। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের কোনো স্থানেই জুমার নামাজের অনুমতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অনুমতির সাথে পাওয়া অনেকটা বিরল যা আগে সামান্য উল্লেখ করেছি এবং উক্ত সদস্যরা ও তা কিন্তু খুব ভালো করে জানেন। কারণ তারা সকলেই এদেশে তাদের শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন কাল কাটিয়ে জীবনের শেষ অধ্যায়ের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। উক্ত তিন সদস্যবৃন্দের মধ্যে আজিজুর রহমান এবং নজরুল ইসলাম গজনবী কেন কাউন্সিলের এই প্রস্তাবে রাজি হোন নি তা প্রকাশ হয় সম্প্রতি কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিংয়ে। এখানে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে, পূর্ব আবেদনটিকে পুনর্বিবেচনার জন্য আবার পুনর্বিবেচনার অনুরোধ কিংবা নতুন করে আবেদন করা এবং আবেদনে এই বলে কউন্সিলকে অনুরোধ করা যে জুমার নামাজ নয় আপাততঃ শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যেন অনুমতি’র আবেদন করা হয় । উল্লেখ্য, উক্ত মিটিংয়ে পূর্বের এপ্লিকেশনের সময়কার আর্কিটেক্টকে ও নিয়ে আসা হয়। আর্কিটেক্ট সবকিছু শুনে বলেন যে, আপনাদেরকে কউন্সিলতো আগেই শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য অনুমতি দিয়েছিলো আপনারা তা অগ্রাহ্য করলেন কেনো ? এখন তা নতুন করে আবেদনের তো কোনো প্রয়োজনই ছিলোনা। আর্কিটেক্টক এর মুখ থেকে একথা শুনে কমিটির সকল সদস্য রীতিমতো হতবাক হয়ে যান এবং এই মর্মে আজিজুর রহমান এবং নজরুল ইসলাম গজনবীকে সকলে কাউন্সিলের দেয়া প্রস্তাব কেনো তারা সবাইকে লুকিয়েছিলেন তার জন্য প্রশ্ন করলে উনারা সঠিক কোনো উত্তর দিতে সম্মত হন নি।

 

বস্তুত পক্ষে ঘটনা কিন্তু ভিন্ন যা আমাদের অনুসন্ধান থেকে বেরিয়ে এসেছে। ২০২২ সালের দিকে কামরু আলী প্রস্তাবিত দুই বছর সময় যখন কেটে যায় তখন কমিটিকে তিনি অনুরোধ করেন তার বিল্ডিংয়ের পুরো মূল্য পরিশোধের জন্য । এক্ষেত্রে যেহেতু ইহা একটি মসজিদ হবে তার জন্য ব্যাংক থেকে সুদ বা মর্টগেজ দিয়ে বিল্ডিং টি কেনা যাবেনা তাই কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রাহিম বিল্ডিংয়ের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ নিমিত্তে একটি সুন্দর উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং তার জন্য তিনি লন্ডন দারুল উম্মাহ নামের একটি ইসলামী চ্যারিটি অর্গানাইজেশন কে এগিয়ে নিয়ে আসেন। আব্দুল রাহিম মূলত দারুল উম্মাহ’র একজন সক্রিয় সদস্য। এক্ষেত্রে বলাবাহুল্য যে দারুল উম্মাহ লন্ডন সহ যুক্তরাজ্যে অনেক শহরে এ পর্যন্ত অনেকগুলো মসজিদ নির্মাণ করেছে এবং সেগুলো সুন্দর ভাবে পরিচালনাও করে আসছে। দারুল উম্মাহ’র উচ্চপদস্থ একজন দায়িত্বশীল শিব্বির আহমেদ কাউসার এই নিমিত্তে রাজি হন এবং তিনি তাহার একটি টীমকে নিয়ে রেইনহাম মসজিদ কমিটির সাথে মিটিং করেন এবং বলেন যে আমরা আপনাদের জন্য বিল্ডিংটি কিনে নেবো, এক্ষেত্রে আপনারা স্থানীয় লোকজনই মসজিদটি পরিচালনা করবেন  এবং আমাদের পক্ষ থেকে আব্দুল রাহিম বা অন্য একজন প্রতিনিধিত্ব করবেন। রেইনহাম মসজিদ কমিটির সকলে সর্বতো ভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন কারণ সকলের দীর্ঘ দিনের একটি বুক ভরা প্রত্যাশা ছিল যদি কোনোভাবে মসজিদটি হয়ে যায় তাহলে সকলে অন্তত মহান আল্লাহকে সেজদা দেয়ার একটি জায়গা পেয়ে যাচ্ছেন এবং আগামী’র প্রজন্মও যারা মুসলিম হিসাবে এই কমিউনিটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন অন্তত তাদের এবং তাদের আগামী’র প্রজন্মের জন্য মহান আল্লাহ’র ডাকে প্রতিদিন পাঁচ বার সাড়া দেয়ার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে যাবে। মসজিদের জন্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যে বসবাসকারীরা দুহাত খুলে টাকা দিতে কুন্ঠাবোধ করেন না মোটেও, স্থানীয়দের কাছে এই বিল্ডিংয়ের মূল্য পরিশোধের এই পাউন্ড গুলো বলতে গেলে কোনো বিষয় নয়, কামরু আলী দুই বছরের সময় দিয়েছিলেন এবং যা ছিল যথার্থ, কমিটি ইচ্ছা করলে এই সময়ের মধ্যে অতি সহজে সম্পূর্ণ £৫,৮০,০০০.০০ পাউন্ড জোগাড় করতে পারতেন। কারণ এর মধ্যে দুইটি রমজান মাস অতিবাহিত হয়েছিলো, যেকোনো একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে আপীল প্রোগ্রাম এর আয়োজন করলে সমস্ত £৫,৮০,০০০.০০ পাউন্ড জোগাড় না হলেও ২শত থেকে ৩শত হাজার পাউন্ড জোগাড় করা তেমন কঠিন ছিলোনা। যার জন্যই দারুল উম্মাহ’র এই প্রস্তাবকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছিলেন।

 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মসজিদ কমিটি বিল্ডিংয়ের মূল্য পরিশোধের নিমিত্তে টাকা উঠানোর জন্য দুইটি রমজান পেয়েও কেনো কোনো টিভি চ্যানেলে আপিল করলেন না বা বাহিরের অন্যান্য মুসলিম কমিউনিটির কাছে শরণাপন্ন হলেন না? আমাদের অনুসন্ধান থেকে দেখা যায় নজরুল ইসলাম গজনবী ও আজিজুর রহমান এক্ষেত্রে দুরভী সন্ধির আশ্রয় নিয়েছিলেন, উনারা দুইজনই প্রতিবার সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হন যে এ ধরণের উপায়ে মানি কালেকশন করার সময় এখনো আসেনি, এ ক্ষেত্রে হ্যাভেরিং কোনোভাবে জানতে পারলে প্লানিং পারমিশনে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্লানিং পারমিশন পাশ পাওয়ার পর তারা এধরণের উদ্যোগ নেবেন বলে সবাইকে আশ্বস্ত করতে সমর্থ হন। এছাড়া দারুল উম্মাহ’র বিল্ডিং কেনার ব্যাপারেও তারা আপত্তি জানান। এখানে বলাই বাহুল্য যে, যখন দারুল উম্মাহ’র এই প্রস্তাব সকলে সানন্দে গ্রহণ করেন তখন নজরুল ইসলাম গজনবী বাংলাদেশে হলিডে কাটাচ্ছিলেন। উনি সংবাদ পাওয়া মাত্র সবাইকে বলেন যে উনি না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তটিকে রহিত করতে এবং উনি বলেন যে, উনার কাছেও এ ধরণের একটি প্রস্তাব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই উনি কমিটির একজন সদস্য তাই সকলে তার এই অনুরোধ কে গ্রাহ্য করেন। আনুমানিক সপ্তাহ দিন পরে নজরুল ইসলাম গজনবী বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসার পর একটি জরুরি মিটিংয়ের অয়োজন হয় এবং সেই মিটিংএ নজরুল ইসলাম গজনবী সবাইকে বলেন যে উনি বিল্ডিংটি কিনে নেবেন এবং যে দামে উনি কিনবেন সেই দামেই তিনি বিল্ডিংটিকে কমিটির কাছে হস্তান্তর করবেন এবং এক্ষেত্রে উনি পাঁচ বছরের সময় কমিটিকে দেবেন বলে ও জানান। যেহেতু নজরুল ইসলাম গজনবী মসজিদ কমিটির একজন সদস্য তাই তার এ প্রস্তাবে সকলে দারুল উম্মাহ’র পরিবর্তে নজরুল ইসলাম গজনবীকেই বিল্ডিংটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমর্থন করেন। কিন্তু রেইনহামের সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিরা নজরুল গজনবীর দুরভিসন্ধি কি তা কেউই বুঝতে সম্মত হন নি।

নজরুল গজনবী এবং আজিজুর রহমান’র দুরভিসন্ধি:

————————————————————————
নজরুল গজনবী এবং আজিজুর রহমান কখন যে কিভাবে বিল্ডিংটিকে আত্মসাতের পরিকল্পনা করছিলেন তা কিন্তু কেউই টের পান নি। অবশ্য এক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আজিজুর রহমান তাকে সকল পরিকল্পনায় সাহায্য এবং সহযোগিতা করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায়। বলা যায় বিভিন্ন সময় কমিটির মিটিং গুলোতে উনারা দুজনই একসাথে গলা মিলিয়ে কথা বলতেন, একজনের যে কোনো প্রস্তাবে অন্যজনকে কখনোই দ্বিমত পোষণ করতে দেখা যায়নি বলে জানা যায়। দু জন্ একসাথে চলাফেরাও ছিলো চোখে পড়ার মতো। এছাড়া দু’জন্ একসাথে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রাহিমকে কমিটি এবং চ্যারিটি অর্গানাইজেশন থেকে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এর দোহাই দিয়ে বহিস্কার করেন। কারণ দারুল উম্মাহ’র কাছে যেহেতু যথেষ্ট ফান্ড ছিল তাই তাহারা রেইনহামের পার্শবর্তী ছুট্টো শহর এলম পার্কে একটি বিল্ডিং কেনে নেয় এবং আব্দুল রহিমকে তা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। উক্ত বিল্ডিঙের দূরত্ব রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র প্রস্তাবিত মসজিদ বিল্ডিং থেকে ২.৯মাইল দূরে অবস্থিত থাকায় যা উনারা দুজনেই সকলকে বুঝতে সক্ষম হন যে চ্যারিটি কমিশনের দেয়া বাধ্যবাধকতা হচ্ছে কোনো চ্যারিটি অর্গানাজাইসনের সদস্য তিন মাইলের বাওয়ান্ডারীর ভিতরে অন্য কোনো চ্যারিটি অর্গানাজাইসনের সদস্য হতে পারবেন না। মূলতঃ আসল কারণ হচ্ছে আজিজুর রহমান এবং নজরুল ইসলাম গজনবী দু’জন্ই মাওলানা ফুলতলী সাহেবের দলের কট্টর সমর্থক আর আব্দুল রাহিম ছিলেন প্রকাশ্যে দারুল উম্মাহ’র প্রতিনিধি এবং ইহা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে ফুলতলী’র দলের সমর্থকেরা কখনো দারুল উম্মাহকে পছন্দ করেন না, কারণ দারুল উম্মাহ পীর সাহেবের ভক্তি প্রথার শক্ত বিরোধী। উল্লেখ্য, নজরুল ইসলাম গজনবী প্রকাশ্যে মিটিংয়ে সকল সদস্যের সামনেই বলেছিলেন যে, দারুল উম্মাহ যেন কোনোভাবেই বিল্ডিংটি কিনতে না পারে তার জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন এবং শতভাগ সফল ও হয়েছেন।

 

নজরুল গজনবী এবং আজিজুর রহমান’র পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: 

—————————————————————————————

কামরু আলী ২০১৯ সালের ২রা এপ্রিল ডিস্ট্রিক্ট ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১১৯১৯৮৮৮ এবং উক্ত কোম্পানির নামেই কামরু আলী বিল্ডিং টি খরিদ করেন। ধূর্ত নজরুল ইসলাম গজনবী কামরু আলীকে এই বলে আশ্বস্থ করেন যে যেহেতু রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র কাছে পর্যাপ্ত ফান্ড এখনো নেই তাই উনি আপাতত কমিটির পক্ষ থেকে বিল্ডিংটি খরিদ করে নেবেন এবং এক্ষেত্রে কামরু আলী যেই দামে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র সাথে ওয়াদা করেছিলেন সেই মূল্য তিনি কামরু আলীকে প্রদান করবেন, কারণ বিল্ডিংটি নজরুল ইসলাম গজনবী উনার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয় যা পরবর্তীতে তিনি রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র কাছেই সমান মূল্য গ্রহণ করতঃ রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটিকে হস্তান্তর করবেন। এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত চুক্তির ভিত্তিতে নজরুল ইসলাম গজনবী একজন আইনজীবীর মাধ্যমে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র সাথে একটি চুক্তিনামাও সম্পাদন করেন। যার ফলশ্রুতিতে কামরু আলী নজরুল ইসলাম গজনবীকে যে কোনো ভাবে ঘুণাক্ষরে অবিশ্বাস করবেন তার কোনো অবকাশ সেখানে নিতান্তই অনুপস্থিত থেকে যায়। যাই হোক, কামরু আলী নজরুল ইসলাম গজনবীকে বিল্ডিংটি বিক্রি করতে সম্মত হন। এক্ষেত্রে কমিটির সেক্রেটারি আজিজুর রহমান £১০০,০০০.০০ (একশত হাজার) পাউণ্ড দিয়ে সহযোগিতা করেন যা তিনি ঐ সময়ে নিউহাম বরো কাউন্সিলে তার একটি বাড়ি বিক্রির টাকা থেকে সহযোগিতা করেছেন বলে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র এক মিটিংয়ে তাকে প্রশ্নের জবাবে সকল সদস্যদের সামনে তা তিনি অকপটে স্বীকার করেন। যাই হোক, কামরু আলী ২০২২ সালের ২৭শে জুলাই ডিস্ট্রিক্ট ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডে নজরুল ইসলাম গজনবীকে ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেন এবং কামরু আলী দীর্ঘ দুই বছর নজরুল ইসলাম গজনবীর সাথে ডাইরেক্টর থেকে বিগত ২রা মার্চ ২০২৪ সালে রিজাইন করেন। নজরুল ইসলাম গজনবী বিল্ডিং খরিদ কার্য সম্পূর্ণ করার পরবর্তী সময় থেকে উনি শুরু করেন নতুন অধ্যায়। তিনি বিল্ডিংটির নাম দেন ডিস্ট্রিক্ট বিসনেস সেন্টার এবং ছুট্টো একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। তিনি রাতারাতি বিল্ডিংয়ের ২য় ফ্লোরে ৭টি অফিস কক্ষ তৈরী করেন এবং প্রতি অফিস কক্ষ £৬০০ থেকে £৭০০ পাউন্ড হিসাবে কিছু ব্যবসায়ীদেরকে ভাড়া দিয়ে দেন। কিন্তু এখানে একটি মজার ব্যাপার হলো, যেহেতু উনি তখনো ট্রেজারের দায়িত্বে এবং ব্যাঙ্ক একাউন্ট নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে তাই উনারা ব্যাংক একাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। স্ট্যান্ডিং অর্ডার এর পাউন্ড প্রতি মাসে যেমন করে আসছিলো সেই ভাবেই ব্যাংকে আসতে থাকে, প্রতি শুক্রবারে মুসল্লীদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত পাউন্ড গুলোও উনার ছুটো ভাই জিয়াউল ইসলাম গজনবী’র সহায়তায় পৌঁছতে থাকে। পূর্বোল্লিখিত রমজান মাস ও দুই বৎসরে সর্বমোট চারটি ঈদের কালেকশনের পাউন্ড উনাদের কাছেই জমা হয়। নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমান বিগত চার বছর কোনোদিন ভূলেও কত কালেকশন ও খরচ হয়েছে তা কখনোই জনসমুক্ষে প্রকাশ করেন নি। এক্ষেত্রে কমিটির অন্যান্য স্থায়ী সদস্যগণ বিভিন্ন সময় অনুরোধ করেও ব্যর্থ হোন।

 

এদিকে নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমান কমিটির সদস্যগনের মধ্যে বিভাজন তৈরী করতে শুরু করেন এবং বেশ কয়েকজন সদস্যকে তাদের দলে ভিড়িয়ে নিতেও সক্ষম হন। কিন্তু তাদের এই সকল কার্যকলাপ এর পক্ষ নেয়া কমিটির সদস্যগনের কাছে আস্তে আস্তে সব কিছু পরিষ্কার হওয়া শুরু হলে এক পর্যায়ে চতুর নজরুল ইসলাম গজনবী যেহেতু উনি বিল্ডিংয়ের মালিক সেই সুবাদে কমিটি এবং চ্যারিটি অর্গানাইজেশন থেকে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টের অজুহাত দেখিয়ে অপ্ট আউট হয়ে পড়েন। কিন্তু তারই আপন সহোদর জিয়াউল ইসলাম গজনবী কমিটিতে থেকে যান কিন্তু সেক্ষেত্রে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেষ্টের কথা আসলেও জিয়াউল ইসলাম গজনবী পদত্যাগ করেননি এবং উনি এখনো বহাল তবিয়তে কমিটিতে রয়েছেন এবং কমিটির মিটিংয়ের সকল খবর যথাযথ ভাবে নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমান এর কাছে পৌছিয়ে যাচ্ছেন। অবস্থা আরেকটু বেগতিক হলে চতুর সেক্রেটারি আজিজুর রহমান ও কমিটি এবং চ্যারিটি অর্গানাইজেশন থেকে পদত্যাগ করেন। এমতাবস্থায় সাময়িক ট্রেজারের হাল ধরেন সামসুল ইসলাম নামে জনৈক স্থায়ী সদস্য। সামসুল ইসলাম যথেষ্ট সচেতন এবং চৌকস এবং তার হাতেই থলের সকল বিড়াল বেরিয়ে আসা শুরু হয়। যেহেতু ব্যাংক একাউন্টের এক্সেস নজরুল ইসলাম গজনবী’র হাতেই ছিল তাই তিনি তার ইচ্ছামতো মুসল্লিদের দ্বারা দান করা মসজিদের পাউন্ডগুলো থেকে তিনি মর্টগেজ পেমেন্ট, বিল্ডিঙয়ের আনুষাঙ্গিক এবং প্রাসংগিক বিল গুলো পরিশোধ করতে থাকেন এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক হলেও সত্য যে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মিটিংয়ে সদস্যদের পক্ষ থেকে অনেকবার বলার পরেও রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র সদস্যদেরকে লেনদেনের কোনো হিসাব আজিজুর রহমান এবং নজরুল ইসলাম গজনবী দু’জনের কেউই প্রদান করেন নি। এসকল বিষয়ে বেশ কয়েকবার মিটিং হলে ধূর্ত নজরুল ইসলাম উনাকে বিল্ডিঙয়ের একচ্ছত্র মালিক বলে দাবি করে বসেন এবং বলেন যে বিল্ডিংয়ের বর্তমান মূল্য ওয়ান মিলিয়ন পাউন্ড এবং রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি যদি বিল্ডিংটি তার কাছ থেকে কিনে নিতে চায় তাহলে তাকে পুরো ওয়ান মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে কিনে নিতে হবে । আর এখন থেকে প্রতি মাসে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি £২,৫০০.০০ পাউন্ড  করে নজরুল গজনবীকে ভাড়া বাবদ বিল্ডিং কিনে নেয়ার আগ পর্যন্ত প্রদান করতে হবে এবং এ বিষয়ে ধূর্ত আজিজুর রহমান একটি নোটিশও জারি করেন। অন্যতায় উনাদের যে পাউন্ড উনি খরচ করেছেন তা আনুমানিক £৮৫,০০০.০০(পঁচাশি হাজার) এবং উনি তার সাথে আরো £১৫,০০০.০০ (পনেরো হাজার) পাউন্ড মিলিয়ে সর্বমোট £১০০,০০০.০০ (একশত হাজার) দিয়ে দিবেন। আর যেহেতু এই বিল্ডিংয়ে মসজিদের জন্য কোনো অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই তাই রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি যেনো তার পক্ষ থেকে দেয়া হবে যে £১০০,০০০.০০ (একশত হাজার) পাউন্ড তা নিয়ে তারা যেন অন্য কোনো স্থানে প্রপার্টির সন্ধান করে নেন।

 

পরিশেষে বলা যায়, রেইনহাম গ্রামে আর কোনো স্থান নেই যেখানে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি কোনো বিল্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সকলের প্রাণের একমাত্র ভরসা মসজিদের এই বিল্ডিংটি কুখ্যাত, অর্থলোভী আর নির্লজ্জ বেহায়া নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমান কর্তৃক এভাবে আত্মসাৎ করে নেবে তা ভেবে সকলেই নির্বাক এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। এদিকে অসৎ নজরুল ইসলাম গজনবী তার দুই ছেলেকে দিয়ে ইদানিং রেইনহাম গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে বাচ্ছাদের জন্য আরাবিক ক্লাসও চালু করেছে। নজরুল ইসলাম গজনবী’র এই কার্যকলাপে তার আসল উদ্দেশ্য কি তা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাই, রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র সদস্যবৃন্দ এখন ভাবছেন বিল্ডিংটি নিয়ে এখন পর্যন্ত যে চক্রান্ত অর্থলিপ্সু, লম্পট এবং  দুর্নীতিবাজ নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমান পর্যায়ক্রমে চালিয়ে এখন যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে তা সকলকে জানানো তাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছেন। তারা সকলে মিলে এদের দু’জনকে সামাজিক ভাবে বয়কট করতঃ সকলের সম্মুখে জবাবদিহিতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবী। তাদের মতে ২০০ শত পরিবার যদি প্রত্যেকে £৩০০০.০০ পাউন্ড করে দুই কিংবা তিন বছরের জন্য মসজিদকে কর্জে হাসানা দিয়ে সাহায্য করতে পারেন তাহলে রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি তা সময়ের ব্যবধানে পরিশোধ করে দিতে পারবে ইনশাল্লাহ। তাছাড়া প্রতি বছর রমজান মাসে লাগাতার আগামী কয়েক বছর কোনো টিভি চ্যানেলে চ্যারিটি আপিল করলেও তারা অনেকটা মোটা দাগে পাউন্ড কালেকশন করে কর্জকৃত পাউন্ড সহজে পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ইনশাল্লাহ। তাই রেইনহাম এডুকেশন সোসাইটি’র মতে মসজিদের বিল্ডিং আত্মসাৎকারী মানুষরূপী শয়তান নজরুল ইসলাম গজনবী এবং আজিজুর রহমান এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে বিল্ডিংটিকে এদের হাত থেকে উদ্ধার করতে সকলের সহযোগিতা এখন সময়ের দাবী । আর তা না হলে আগামীর প্রজন্মকে ইসলামের অনুশাসন শেখানো এবং ব্যবস্থা থাকতেও প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য কোনো বন্দোবস্ত করতে না পারার দায়ে আল্লাহ’র কাছে শেষ বিচারের দিনে রেইনহাম গ্রামের সবাইকে জবাবদিহিতা করতে হবে বলে তাদের বিশ্বাস।

Related Posts

Best Guide to Rabbit House and Get Luxury Indoor Haven – Copy

Wireless Charging Case with LED Display: 2500mAh charging case supports 16 times fully charging for wireless

Best Guide to Rabbit House and Get Luxury Indoor Haven – Copy

Wireless Charging Case with LED Display: 2500mAh charging case supports 16 times fully charging for wireless
Scroll to Top